তীব্র বিক্ষোভের মুখে ইসরাইলের বিচার বিভাগ সংস্কারের বিতর্কিত পরিকল্পনা থেকে পিছিয়ে এসেছেন প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ক্ষমতাসীন জোট ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কায় সোমবার এটি স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছেন বলে বার্তাসংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে জানা গেছে।

এর আগে সোমবার সকালে দেশটির সেনাপ্রধান সেনাদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, ‘বর্তমান প্রেক্ষাপট অন্যান্য যেকোনো সময় থেকে ভিন্ন। আমাদের ঘরে ঝড় বইছে। এই সময় যথাযথ মর্যাদায় দায়িত্ব পালনের বিকল্প নেই।’

কট্টর-ডানপন্থি জোটের নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গভির বলেছেন, সংসদের পরবর্তী অধিবেশন পর্যন্ত বিচার বিভাগ সংস্কারের পরিকল্পনা স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

এর আগে নেতানিয়াহু জাতির উদ্দেশে দেয়া এক ভাষণে বলেন, সংস্কারের উদ্যোগটি পার্লামেন্টের আগামী অধিবেশন পর্যন্ত পিছিয়ে দেয়া হবে- যাতে এ ব্যাপারে ব্যাপকভিত্তিক ঐকমত্যে পৌঁছানো যায়। তিনি আরো বলেন, তার সরকার দেশে গৃহযুদ্ধ চায় না।

এ উদ্যোগের বিরুদ্ধে দেশটিতে প্রায় সর্বস্তরের হাজার হাজার মানুষ দীর্ঘদিন ধরে বিক্ষোভ করছেন। সোমবার দেশজুড়ে ডাকা ধর্মঘটের কারণে বিমান ও সমুদ্র বন্দর অচল হয়ে পড়ে, ব্যাংক, বিশ্ববিদ্যালয় ও দোকানপাটও বন্ধ হয়ে যায়। ডাক্তার ও স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারাও ধর্মঘটে যোগ দেন।

এর আগে সংস্কারের উদ্যোগ বন্ধ করার ডাক দিয়ে বরখাস্ত হন সরকারের প্রতিরক্ষামন্ত্রী, দেশটির শক্তিশালী সামরিক বাহিনীও এর বিরোধিতা করছে, এমনকি ইসরাইলের প্রেসিডেন্ট স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহŸান জানিয়েছিলেন এই পরিকল্পনা পরিত্যাগ করার জন্য।

বিরোধিতাকারীরা বলছেন, বিচার বিভাগে যেসব পরিবর্তনের কথা বলা হচ্ছে- তা ইসরাইলের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দেবে।

এর আগে আন্দোলনকারীদের পক্ষে মন্তব্য করায় রোববার (২৬ মার্চ) ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্তকে বরখাস্ত করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। এর প্রতিবাদে আবারও রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছে আন্দোলনকারীরা।

শনিবার (২৫ মার্চ) ইসরাইলের টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ভাষণে প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ত সরকার প্রস্তাবিত বিচার বিভাগ সংস্কার প্রক্রিয়া স্থগিতের আহŸান জানান। তার সেই আহ্বানে মাত্র একদিন পরই তাকে বরখাস্ত করা হলো।

ইয়োভ গ্যালান্তের বরখাস্তের খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী নীল-সাদা ইসরায়েলি পতাকা নিয়ে গভীর রাতে দেশের বিভিন্ন শহরের রাস্তায় নেমে আসে। একপর্যায়ে নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেঙে জেরুজালেমে নেতানিয়াহুর বাড়ির বাইরেও ভিড় জমা হয়।

ইসরাইলি প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বরখাস্তের প্রতিক্রিয়ায় বিরোধীদলীয় নেতা ইয়ার লাপিদ এবং বেনি গান্তেজ এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছেন, ‘রাজনীতির খেলায় রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা কখনোই তুরুপের তাস হতে পারে না। নেতানিয়াহু আজ রাতে চূড়ান্ত সীমারেখাও অতিক্রম করেছেন।’ বিবৃতিতে তারা নেতানিয়াহুর লিকুদ পার্টিকে ‘জাতীয় নিরাপত্তা বিপর্যস্ত’ করার কার্যক্রমে হাত না দেওয়ার আহŸান জানিয়েছেন।

উলে­খ্য, গত ২৯শে ডিসেম্বর ইসরাইলের নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন কট্টরপন্থি নেতা বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। এরপরই সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতা কমিয়ে বিচারব্যবস্থা সংস্কারের উদ্যোগ নেন তিনি। নতুন সংশোধনীতে, সুপ্রিম কোর্টের যে কোনো সিদ্ধান্ত বাতিলের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে ইসরাইলের পার্লামেন্টকে।

এই উদ্যোগের জেরে নেতানিয়াহু নিজ রাষ্ট্রের জনগণের রোষানলে পড়েন। এতে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে সাধারণ মানুষ। প্রায় প্রতিদিনই তেল আবিবের রাস্তায় জড়ো হন হাজারো বিক্ষোভকারী। পুলিশি বাধার মুখে পড়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় দু’পক্ষ। এতে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় পুরো এলাকা।